বার্তা৭১ ডটকমঃ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বিভিন্ন নাইট ক্লাবে ঠাঁই হয়েছে অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি তরুণীর। ব্যাংকক নগরীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ নাইট ক্লাব ও ড্যান্স বার রয়েছে। বাংলাদেশের তরুণীরা কাজ না পেয়ে এসব ক্লাবে বিশেষ নৃত্য-শিল্পী হিসেবে বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রাম শুরু করেছেন। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশি তরুণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই তরুণীদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তারা বাধ্য হয়ে এমন পেশা বেছে নিয়েছেন। মিতা, ইলা, সোহানা, শিলা ও মিলি নামের কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
বিশেষ করে শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে বিউটিশিয়ান, সংগীত শিল্পী বা অন্য পেশার নাম করে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারিত তরুণীরা জানায়, প্রতারক চক্রের কয়েকটি নাচের স্কুল রয়েছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায়। মূলত এসব তথাকথিত নাচের স্কুলে প্রশিক্ষণার্থী তরুণীদের বিদেশে ভালো চাকরি দেওয়ার নাম করে সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চল থেকে মোটামুটি চলনসই চেহারার তরুণীদের মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন নাচের স্কুলে পার্ফর্মিং আর্টসের কোর্স করিয়ে ব্যাংকক পাঠানো হচ্ছে। এসব কাজে পাচারকারী চক্রের দুই ডজন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ব্যাংককে প্রতারণার শিকার এমন তরুণীদের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। প্রয়োজনে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতারিত তরুণীদের কথা : রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার বাসিন্দা মিলি নামের এক তরুণী জানান, ব্যাংকক শহরের সুকুমভিত এলাকার হোটেল গ্রেজে বাংলাদেশের চারজন তরুণী আছেন। তাকে প্রতিদিন চার-ঘণ্টা নাচের জন্য তিনশ বাথ (থাইল্যান্ডের মুদ্রা) দেওয়ার কথা। কিন্তু মাস শেষে যে পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা ছিল তাও দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া প্রতিপাত রোডের মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে রয়েছেন দুজন তরুণী।
এ ছাড়া লর্ড রোডের রয়েল প্লাজায় রয়েছেন তিনজন, কিং হোটেলে দুজন এবং আইল্যান্ড ইন্টারন্যাশনালে একজন রয়েছেন। এভাবে তরুণীদের বিদেশে নিয়ে বাংলাদেশিদের পরিচালিত বারে নাচের পাশাপাশি জোর করে অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছে প্রতারকরা। অনেকে বার মালিকদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পুলিশ সদর দফতরের টাস্কফোর্স ও মনিটরিং সেলের হিসাব অনুযায়ী শতাধিক পাচারকারী চক্রের সদস্য দেশে সক্রিয় রয়েছে। সূত্র জানায়, কখনো কখনো দু-চারজন পাচারকারী গ্রেফতার করা হলেও বেশির ভাগই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মূলত পাচারকারীরা রাতের বেলায় এসব তরুণীকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে থাকে। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বাসিন্দা ইলা (ছদ্ম নাম) অভিযোগ করে জানান, আমাকে ৪০ হাজার টাকা বেতনে নার্সিং হোমে চাকরি দেওয়ার নাম করে মালিবাগের খালেদ আমাকে ব্যাংকক শহরের একটি হোটেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে দেখি কাজের নামে চলছে অনৈতিক কারবার। এখন দেশে ফিরে যাওয়ার পথ নেই। তাই বাধ্য হয়ে সব কিছু মেনে নিয়েছি। ইলার মতো মিলা ও শিলার অভিযোগ প্রায় একই ধরনের। তারা জানান, আমরা প্রতারক চক্রের অভিনব প্রতারণার শিকার। আমাদের তিনজনকে বিউটিশিয়ানের কাজ দেওয়ার কথা বলে, পুরান ঢাকার মিজান ব্যাংকক শহরের এক হোটেলে চার মাস আগে রেখে যায়। এখানে আসার জন্য মাথা পিছু দেড় লাখ টাকা মিজানের হাতে তুলে দিয়েছি। পরে বাধ্য হয়ে এসব করছি। এখন দেশে ফিরে যেতে চাই বলে কান্নায় চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়তে থাকে।