বার্তা৭১ ডটকমঃ চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে আবারও নলকূপের পাইপ দিয়ে নির্গত হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুর চরে একটি খামার বাড়িতে স্থাপিত নলকূপের পাইপ দিয়ে অনবরত নির্গত হচ্ছে গ্যাস। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক নলকূপের পাইপে গ্যাস নির্গমনে মীরসরাইবাসী আগামী দিনের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা ভাবছেন।
সরেজমিনে বৃহষ্পতিবার বিকেলে ইছাখালী ইউনিয়নের পূর্ব ইছাখালীর সাধুরচরে গিয়ে দেখা গেছে, নির্গত গ্যাস নিয়ে স্থানীয় জনতার নানা কৌতূহল। স্থানীয়রা পাইপের মুখে আগুন জ্বালিয়ে তা উপভোগ করছেন। গত দুই দিন ধরে নলকূপের পাইপ দিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
ইছাখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইউএফ ফান্ডের আওতায় পূর্ব ইছাখালী মৌজায় সাধুর বাজার চরে ৫ একর আয়তনে স্বরনিকা কৃষি খামার লিমিটেড প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি ওই প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রকল্প নিয়ন্ত্রন করা জন্য সেখানে একটি খামার বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। গত ১৪ ডিসেম্বর খামার বাড়িতে নলকূপের মিস্ত্রিরা ৬ ইঞ্চি প্রস্থ বিশিষ্ট পাইপে ৭২ ফুট পর্যমত্ম বোরিং করে একটি নলকূপ স্থাপন করেন। সেই পাইপ দিয়ে পাম্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় পানির সুব্যবস্থার জন্য চেষ্টা করা দেখা যায় পানি উঠছে না। পরদিন পাইপের মুখ দিয়ে বুদবুদ উঠতে দেখে সন্দেহ হলে দেশলাই কাঠি জ্বালালে আগুন ধরে ওঠে। পাইপ দিয়ে গ্যাস বের হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ইউসুফের খামার বাড়িতে সমবেত হচ্ছে।
ইছাখালীর মত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্ভাবনার বিষয়টিকে কোনভাবেই আমলে নিচ্ছেনা সরকারের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ জুন উপজেলার ১৩ নম্বর মায়ানী ইউনিয়নের মধ্যম মায়ানী গ্রামের আব্দুল হাকিমের বাড়িতে সদ্য স্থাপতি একটি নলকূপের একপাশ দিয়ে বুদ বুদ করে গ্যাস নির্গত হচ্ছে অন্য পাশ দিয়ে নির্গত হচ্ছে স্বচচ্ছ পানি।
উপজেলার ১২নং খৈয়াছরা ইউনিয়নের পশ্চিম পোলমোগরা জহুরল আমিনের বাড়ির ভূট্টো ড্রাইভার তার ঘরের পেছনে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করেছিল গত ২ ফেব্রুয়ারী। পাইপ বোরিং ৫৩ ফুট গভীরে পৌছলে নির্গত পানিতে একধরণের উৎকট গন্ধ ছড়ালে দিয়াশলাই জালাতেই অনর্গল আগুল জলতে থাকে। এছাড়াও ১২ নম্বর খৈয়াছরা ইউনিয়ন, ১৬ নম্বর শাহেরখালী ইউনিয়নের গ্রামীন ব্যাংকের পাশের একটি জমিতে গ্যাস নির্গত হয়।
ইতিপূর্বে ২০০৪ সালে উপজেলার মমত্মাননগর শহীদ মেম্বার বাড়িতে নলকূপের পানিতে একই ভাবে অনেকদিন গ্যাস নির্গত হয়েছিল, এছাড়া হাইতকান্দি বাপনা পুকুর আবুল হোসেন মিয়ার বাড়িতে ও সাহেরখালী গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ব পাশ্বে একইভাবে স্থানীয় জনগন গ্যাসের আলামত পেয়েছে এবং জনতা সেখানে মাটির গর্তে আগুন ধরিয়ে দিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী গ্যাস কোম্পানীগুলোর গত দুই দশকের ভূমিকায় দেশে যে সব গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করছে তার মধ্যে সাঙ্গু বিবিয়ানা ও মৌলভী বাজার গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের পর চট্টগ্রামে সিমুতাং ছাড়া আর কোন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়নি। দেশের একমাত্র তেলগ্যাস অনুসন্ধ্যান ও উৎপাদন কোম্পানী বাপেক্স-এর কাজ চলছে অনেকটা ঢিলেঢালা তালে। যার প্রমাণ মিলে মীরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলার কয়েকটি স্থানে এর পূর্বে গ্যাসের আলামত নিয়ে সঠিক অনুসন্ধান আজো হয়নি ।
গ্যাসের অনুসন্ধান বিষয়ে বাপেক্সের জিওলোজিক্যাল বিভাগের দায়িত্বরত আলমগীর হোসেন জানান, এই অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় যেসব গ্যাসের পকেট মুখ পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত অনুসন্ধান হলেই এখানে প্রাকৃতিক খনি রয়েছে কিনা তা সঠিকভাবে বলা যাবে। তিনি আরও বলেন, এই সব লক্ষণ গুলোর প্রেক্ষিতে আপাতত সম্ভাবনা উজ্জল বলা চলে।
সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, এই বিষয়ে খনিজ মন্ত্রণালয়কে পর্যবেক্ষন করে সার্বিক উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব করছি। এছাড়া বিষয়টি তিনি সংসদে উত্থাপন করার ঘোষনা দেন। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের এই মীরসরায়ে গ্যাস আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান এখন সময়ের দাবী।এ প্রসঙ্গে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলেও নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন ইনিউজকে জানিয়েছেন।