ঢাকা, ৫ জানুয়ারি,বার্তা৭১ ডটকমঃ ‘বৃত্ত’ থেকে বেরুতে পারছে না বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। সমালোচকরা বরাবরের মতই বিটিআরসিকে খোঁচা মারার সুযোগ পাচ্ছেন এই বলে ‘আরে এই প্রতিষ্ঠানটি আসলে টেলিকম খাতের উন্নতির চেয়ে ‘লাইসেন্স’ ব্যবসা নিয়ে মেতে থাকতে চায়।’
বহুল আলোচিত ভিওআইপি সার্ভিস প্রোভাইডারের (ভিএসপি) জন্যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সর্বোচ্চ ২৫৭টি লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসির প্রতি টেক বিশেষজ্ঞরা এই মন্তব্য করেন। তবে বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে ওরাই ব্যসায়িক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তারাই আনছেন, তারা লাইসেন্স পাবার শর্ত পূরণ করতে পারছেন না।
তবে জানা গেছে, বিটিআরসি আড়াইশ ভিএসপি লাইসেন্স প্রদানের সুপারিশ করলেও বিটিআরসিতে ১,৫০৮টি আবেদন জমা পড়েছে। ইতিমধ্যে আবেদনগুলো যাচাই বাছাই শেষে তা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোও হয়েছে।
এখন এর মধ্যে কোন কোন আবেদনের বিপরীতে লাইসেন্স দেওয়া হবে সে বিষয়ে মন্ত্রনালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিটিআরসি একই সঙ্গে লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়ে কয়েকটি বিকল্প দিয়ে একটি হিসাবও তৈরী করে মন্ত্রণোলয়ে পাঠিয়েছে। সেখানে কয়েকটি ধাপে আন্তর্জাতিক টেলিফোন কল আসার পরিমাণ এবং তার প্রেক্ষিতে লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি বলা হয়েছে। কয়েকটি অংকের ওপর এই হিসাবের হেরফের হতে পারে বলেও জানিয়েছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি জানিয়েছে, সরকারের অনুমোদনের পরেই লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ভিওআইপি সার্ভিস প্রোভাইডার বা ভিএসপি লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত আরো বছর দশেক আগেই নেয় সরকার। কিন্তু অবশেষে সেটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। তবে এর মধ্যে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডবলিউ) তৈরী করা হয়েছে। এই আইজিডবলিউগুলোও বিদেশ থেকে ভয়েস কল আমদানির কাজ করে থাকে।
বিটিআরসির একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেড় হাজার আবেদনের মধ্য থেকে অন্তত ৩৫টি আবেদন অসম্পূর্ণ। আবার একশ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯ নম্বর পেয়েছে একটি আবেদন। গত ১৪ অক্টোবরের মধ্যে আবেদনগুলো বিটিআরসিতে জমা পড়ে। পরে দুই মাসেরও বেশী সময় নিয়ে এগুলোর মূল্যায়ন কাজ করে বিটিআরসি।
বিটিআরসি বলছে, যতো কল দেশে আসবে তার কতো শতাংশ আইজিডবলিউগুলো আনবে, আর কতোগুলো ভিএসপি অপারেটররা আনবে সেটির ওপর নির্ভর করেই লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারণ করা উচিৎ। তা না হলে অন্যান্য লাইসেন্সের মতো এখানেও বিপর্যয় হতে পারে। বিটিআরসির হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন পাঁচ কোটি আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলকে বৈধ ধরলে সর্বোচ্চ ২৫৭টি লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মোট কলের যদি ৪০ শতাংশ ভিএসপি অপারেটররা পায় তাহলেই কেবল এই সংখ্যক লাইসেন্স ওয়ালারা লাভবান হতে পারে। মোট কলের ৪০ শতাংশ ভিএসপি অপারেটরকে দেওয়ার প্রস্তাব করে মোট কলের পার্থক্য করে আরো কয়েকটি হিসেব সাজানো হয়েছে। কোনো এক সময় মোট কল ১০ কোটি মিনিট পেরিয়ে গেলে সর্বোচ্চ ৫১৪টি ভিএসপি অপারেটরের এই ব্যবসায় থাকা উচিৎ কলেও জানিয়েছে বিটিআরসি।
তবে মোট কলের ২৫ শতাংশ যদি ভিএসপি অপারেটরদের দেওয়া হয় তাহলে বর্তমান পাঁচ কোটি কলের বিপরীতে লাইসেন্স হওয়া উচিৎ সর্বোচ্চ ১৯২টি। তবে ভবিষ্যতে কলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ কোটি হলে ২৫ শতাংশ হারে ৩২১টি লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে বলে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের আয় ভাগ করার ক্ষেত্রে এখন চারটি ধাপ থাকলেও ভিএসপি আসার পর তা হবে পাঁচটি। ফলে এই খাতে সরকারের আয় অবশ্যই কমবে।
এদিকে বিটিআরসির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা আশা করেছিলেন, অন্তত ৫/৭ হাজার আবেদন পড়বে। কিন্তু আবেদন কম পড়ায় সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়াও এখন সহজ হবে।