বার্তা৭১ ডটকমঃ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের মামলার রায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।
এর আগে ১৪ জুন মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
১৯ জানুয়ারি থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায়সহ রাষ্ট্রপক্ষের ১৪ জন সাক্ষী। অন্যদিকে ২৬ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ফোরকান মল্লিকের পক্ষে সাক্ষ্য দেন ৪ জন সাফাই সাক্ষী।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরকরণ ও দেশান্তরকরণের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। বিপক্ষে শুনানি করেন ফোরকান মল্লিকের আইনজীবী আব্দুস সালাম খান।
২ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। পরে তিনি অভিযোগ আমলে নেয়ার পক্ষে শুনানি করেন।
২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। ২৮ অক্টোবর এই প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়া হয়। একই বছরের ২৬ জুন শুরু করে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত মামলার তদন্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায়।
ফোরকান মল্লিকের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছইলাবুনিয়া গ্রামে। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০১৪ সালের ২৫ জুন সকালে পটুয়াখালী গোয়েন্দা শাখার একটি দল বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফোরকান মল্লিককে গ্রেফতার করে।
ফোরকানের ৫ ‘যুদ্ধাপরাধ’
অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালে বাংলা আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে (২৭ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে) কোনো একদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী রাজাকার সদস্যরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন কাকড়াবুনিয়া গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে হাওলাদার বাড়ির মো. কাঞ্চন আলী হাওলাদার, হাজী আবুল হাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে আটক, নির্যাতন এবং বাড়িঘর লুটপাট করে তারা। তাদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করে একমাস আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের আষাঢ় মাসের শেষদিকে (২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে) একদিন ফোরকান মল্লিক ও তার রাজাকার সঙ্গীরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোট ও স্পিডবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন দেউলী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।
অভিযোগ ৩: একাত্তরের ১২ অগাস্ট থেকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদবাহক কাকড়াবুনিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মির্জাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের জমাদ্দার, সুবিদখালী বাজারের ডাক্তার দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তার স্ত্রী বিভা রাণীকে আটক করে তারা। ওই গ্রামে তারা হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়।
অভিযোগ ৪: ভাদ্র মাসের ৫ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত (২২ থেকে ২৫ অগাস্ট) ফোরকান মল্লিক ও তার রাজাকার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিয়ে কাকড়াবুনিয়া বাজারে যায় এবং হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়।
অভিযোগ ৫: ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি (২৯ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর) সময়ে একদিন ভোরে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা মির্জাগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণ কলাগাছিয়া গ্রামের যায় এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেন মৃধার বাড়িতে লুটপাট ও নির্যাতন চালায়।