বার্তা৭১ ডটকমঃ শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের ধাক্কা সামলে উঠে ফের রাজনীতিতে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট, স্ট্রংম্যান মহিন্দা রাজাপক্ষে। তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ইতিমধ্যে একটি দল গঠনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। কাগজে-কলমে যদিও রাজাপক্ষে এই দলের কেউ নন, কিন্তু সবার কাছে এটা পরিষ্কার যে, পর্দার পেছনে থাকলেও তিনিই শ্রীলংকা পদুজানা পেরামুনা পার্টি অর্থাৎ শ্রীলংকা পিপলস ফ্রন্টের মূল ব্যক্তি।
মজার ব্যাপার হলো, রাজাপক্ষে এখনো তার পুরনো দলেই আছেন, যার নেতৃত্ব এখন তারই সাবেক সহযোগী, প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার হাতে। এই সিরিসেনার কাছেই গত নির্বাচনে হেরে যান রাজাপক্ষে।
কাগজে-কলমে নতুন দলের প্রধান হয়েছেন রাজাপক্ষের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গামিনি পেইরিস। এছাড়া রাজাপক্ষের ভাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপক্ষেও দলটির বড় পদে আছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জেহান পেরেরা বলেন, পেইরিস এ দলের আসল নেতা নন। রাজাপক্ষে যতোদিন না দৃশ্যপটে আসছেন ততোদিন তিনি কাজ চালিয়ে যাবেন আর কী।
নতুন দল শ্রীলংকা পিপলস ফ্রন্ট খোলাখুলিই তাদের লক্ষ্যের কথা জানালেও রাজাপক্ষে নিজে এখনো এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। গত মাসেও সাংবাদিকরা এ নিয়ে ছেঁকে ধরেছিলেন রাজাপক্ষেকে। কিন্তু তিনি ‘দেখি, এখনো তো কিছু হয়নি’ বলে এড়িয়ে যান।
তবে তার ভাই বাসিল রাজাপক্ষে অনেকটা খোলাখুলি কথা বলেছেন। রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে নতুন দলের অফিসে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো মহিন্দা রাজাপক্ষেকে ফিরিয়ে আনা। তিনিই আমাদের ভাবী নেতা, আধ্যাত্মিক নেতা। তার ভিশনই আমাদের নীতি।
মহিন্দা রাজাপক্ষে ২০০৫ সাল থেকে পরবর্তী নয় বছর শ্রীলঙ্কা শাসন করেন। এ সময় তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগও উঠতে থাকে। গৃহযুদ্ধের দিনগুলোতে সামরিক বাহিনী যেসব ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, তা তদন্তের দাবি পূরণে ব্যর্থ হন রাজাপক্ষে। এর পাশাপাশি দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পুঞ্জিভূত হতে থাকে। তারপরও ২০১৫ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হবেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল। তামিল বিদ্রোহীদের পরাভূত করে ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোয় সংখ্যাগুরু সিংহলীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। সমর্থকদের অনেকে তো তাকে ‘রাজা’ ও ‘রক্ষাকর্তা’ বলেও অভিহিত করতো।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে চমক দেখান রাজাপক্ষেরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরিসেনা। তিনি নির্বাচন করেন এবং জয়ী হন। এজন্য তিনি জোট করেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির সঙ্গে। সিরিসেনার সঙ্গে থাকলেও ফ্রীডম পার্টির অনেকে এটি মেনে নিতে পারেনি। এরা ক্ষমতাসীন দলে থাকলেও আছে ‘বিরোধী’ হয়েই। রাজাপক্ষের বড়ভাই চমল, তার ছেলে নমল, আরেক ভাই গোতাভ্যা মাহিন্দা এখনো সরকারি দল ফ্রীডম পার্টিতেই আছেন, নতুন দলে যাননি।
ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়। এছাড়া সিরিসেনা সরকার তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এমনকী খুনের অভিযোগ তদন্তেরও নির্দেশ দেয়।
কবে তিনি নতুন দলে যোগ দিয়ে সাজানো মঞ্চে আসীন হবেন? এ প্রশ্নের জবাব কারো জানা নেই। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জেহান পেরেরা মনে করছেন, আসলে পুরনো দলের মায়া ছাড়তে পারছেন না রাজাপক্ষে। কারণ, একদিকে তার পিতা এ দলের যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা, অন্য দিকে নিজেও দলের পুরনো সদস্য। সূত্র : এপি