নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সমালোচনাকারী মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন দেশের খ্যাতনামা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি বলেছেন, মন্ত্রীদের এ ধরনের বক্তব্য শোভন নয়। এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত না। গুণী লোকদের সম্মান করতে হবে। এতে নিজেদেরও সম্মান বাড়বে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেছেন, তার প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি, ড. ইউনূসের নখের যোগ্যও তিনি নন।
গতকাল ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে ‘গুম, অপহরণ ও সামপ্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ নিয়ে একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। মুক্ত চিন্তা নামের একটি সংগঠন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের এই একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ড. ইউনূসকে নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি (সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম) একেবারে হাসির কথা বলেছেন। কত বড় বেকুবের দেশে আমরা আছি! একটি বৃহত্তম দলের বড় নেতা মনে করেন, শান্তিতে নোবেল পেতে হলে যুদ্ধ থামাতে হবে। মন্ত্রীরা যে এমন বেকুবের মতো কথা বলতে পারেন তা আমি ভাবতেও পারি না।
তিনি বলেন, দেশে যে পরিস্থিতি চলছে, এমন সমস্যার সমাধানে দুই নেত্রীকে সংলাপে বসতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংসদে বা সংসদের বাইরে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যদি এত এলার্জি থাকে তবে অন্য কোন নাম হতে পারে। ব্যারিস্টার রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী হটকারী কোন মনোভাব দেখাবেন না বলে আশা করি। প্রধানমন্ত্রী জানেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে গোঁয়ার্তুমি নয়, একসঙ্গে বসতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, নইলে হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কথা ও কাজে মনে হচ্ছে, তারা আর আসতে পারবে না। এই চিন্তা কেন? নিশ্চয় কোন দুর্বলতা রয়েছে।
ইলিয়াস ইস্যু তৈরি করা হয়েছে সুরঞ্জিতের ইস্যুকে চাপা দেয়ার জন্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইলিয়াস ইস্যুকে চাপা দিতে বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর এত কাছে গিয়ে যদি বিএনপি নেতারা বাসে আগুন দিতে পারে, তাহলে সরকারের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া উচিত।
আদালতের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচার হচ্ছে মানুষ দেখে, আইন দেখে নয়। আইনের বিচার খুব কম হচ্ছে। আপিল বিভাগকে এখন মানুষ স্থগিতাদেশ বিভাগ (স্টে ডিভিশন) বলছে। রেল মন্ত্রণালয়ের কেলেঙ্কারি চাপা দিতে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ইস্যু আনা হয়েছে বলেও মনে করেন ব্যারিস্টার রফিক। অনুষ্ঠানে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কাদের সিদ্দিকী বলেন, রাষ্ট্র এখন মানুষের ধর্ম নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেছে। আইন করা হচ্ছে এখন নাকি ভিন্ন ধর্মের মেয়েদেরও বিয়ে করা যাবে। আমার মনে হয়, আমার ভাগ্নে (সজীব ওয়াজেদ জয়)-র বিয়েকে জায়েজ করার জন্য এই আইন করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে অর্থমন্ত্রী সমালোচনা করার বিষয় উল্লেখ করে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের উদ্দেশ্যে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আপনারা দেখেন তো, আইন দিয়ে এই লোকটির মুখ সেলাই করে দিতে পারেন কিনা।
তিনি বলেন, আপনি একটু চেষ্টা করেন, দেশের জন্য না হয় জীবন দিয়ে দেবো। সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, নোবেল নিয়ে প্রশ্ন তোলাও এক ধরনের গুম। দেশে এখন মানুষের সম্মানও হরণ করা হচ্ছে। দেশ কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে তার মনমর্জি মতো চলবে।