বার্তা৭১ ডটকমঃ এবার সরকারের মন্ত্রীসভায় রদবদলের চিন্তাভাবনা চলছে । দীর্ঘদিন থেকেই মন্ত্রীসভায় রদবদল ও নতুন কিছু মুখ যুক্ত হবার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এতদিন দেশের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা থাকায় সেটা করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। বর্তমানে সবক্ষেত্রে একটা স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসায় ফের সচিবালয় ও দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে মন্ত্রীসভায় রদবদলের বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন আরো জোরালো হয়ে উঠেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি ঈদের পরপরই মন্ত্রসীভায় রদবদল ও কিছু নতুন মুখ যুক্ত হবার ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে।
জানা যায়, ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী সময়ে গঠিত মন্ত্রিসভায় ত্যাগী নেতাদের সম্মানিত করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুসময়ে হাইব্রিড নেতাদের উত্থানেও টলেননি তিনি। বর্তমান সরকার গঠনকালে আলোচিত-সমালোচিত অনেক নেতাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়ে গঠন করেন নতুন কেবিনেট। তখন থেকেই ছিটকে পড়া নেতাদের কম পরীক্ষা নেননি প্রধানমন্ত্রী। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মন্ত্রিসভায় নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, এমন কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা।অন্যদিকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ কামরুজ্জামানের ছেলে রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্বজামান লিটন, দলীয় কোন্দল নিরসন ও সমন্বয়কারী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে যাচ্ছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও নির্বাচনে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতির জন্য ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপিও এ তালিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির এক প্রভাবশালী নেতা জানান, মন্ত্রিসভায় রদবদল গত বছর শেষের দিকে করার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও জ্বালাও পোড়াওয়ের কারণে তা হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে অনেক নেতা যারা মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়েছেন, অনেকেই দলীয় প্রধানের কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অনেকে সফল হয়েছেন। বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় ইমেজ ফিরিয়ে এনেছেন। এখন দেশের অবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ায় শিগগিরই মন্ত্রিসভায় রদবদলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিতর্কিত নেতাদের কর্মকান্ডে এখনো সজাগ প্রধানমন্ত্রী।
আবার অনেকে আগে ভুল করলে এখন অনেক ভালো কাজ করছেন। বিশেষ করে যেসব নেতা ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের আপ্রাণ চেষ্টা করে জিতিয়ে এনেছেন। সেই সময় প্রতিপক্ষের হিংসাত্মক রাজনীতি মোকাবিলা করেছেন, চলতি বছর শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন দমাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জন্য আটঘাট বেঁধে নেমেছিলেন, তাদের সম্মানিত করতে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে জামায়াত অধ্যুষিত মতিঝিল ও রমনা থানায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। থানা দুটির সব ওয়ার্ডেই ছিল বিএনপি-জামায়াতপন্থী কাউন্সিলর। কিন্তু এবার দলীয় নেতাদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও কোন্দল দমিয়ে ঐক্যবদ্ধ করার সফলতা দেখিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া রংপুর বিভাগে প্রতিটি জেলা সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করায় আওয়ামী লীগের এই নেতার ওপর সন্তুষ্ট শেখ হাসিনা। ফলে বর্তমান সরকারের শুরুতে মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়া আলোচিত এ নেতা এবার মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও রাজশাহীর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দলীয় প্রার্থী সাঈদ খোকনের সঙ্গে হাজী সেলিম, কামরুল ইসলামের ঐক্য ও বিদ্রোহ দমনে সফল হওয়ায় তাদের দ্বারও খুলছে। উত্তর সিটিতে দলীয় প্রার্থী আনিসুল হকের হয়ে দলের নির্দেশে ব্যাপক কাজ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ ছাড়া বর্তমানে দলে তার অবস্থা আগের তুলনায় অনেক সক্রিয় হওয়ায় তিনিও মন্ত্রিসভায় ফিরছেন বলে জানা গেছে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের ক্ষেত্রেও তেমনটিই শোনা গেছে।
অন্যদিকে মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুর করিম সেলিম, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবীর নানক।
জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকী অপসারিত হওয়ার পর ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়টি এখনো খালি । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও নেই পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। এখন আবার এলজিআরডি মন্ত্রণালয়টিও খালি হলো। এছাড়া আরও কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন যাদের কাজে প্রধানমন্ত্রী অখুশি। এসব মন্ত্রীর কাজের ফাইল অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে জমা হয়েছে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।প্রধানমন্ত্রী পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে তাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তাদের কারও কারও ব্যাপারে সম্প্রতি কিছু অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রিসভা গঠন করার পর থেকেই সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী তার কিছু কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে সরকারকে কয়েকবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন। এ ছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদার আওয়ামী লীগের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের ‘ক্যাশ চাই’ বক্তব্য নিয়েও সরকার ও দল বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল। অন্যদিকে কিছু কিছু মন্ত্রী আছেন, যারা দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাদেরও খেসারত দিতে হতে পারে।
জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে আঁচ পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে। এ ছাড়া বিভিন্ন সূত্র থেকে তিনি রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। কাজে গতি আনতে তিনি বারবার পরামর্শ দিলেও অনেকে তা আমলে নিচ্ছেন না। ফলে কেবিনেটের বাইরে থাকা দলের দুর্দিনের নেতাদের মন্ত্রণালয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এ সিদ্ধান্ত চলতি বছরের শুরুতেই বাস্তবায়ন হতো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতাল ও এরপর সিটি নির্বাচনের কারণে না হয়নি। এখন সরকার সবদিক থেকে সফল হওয়ায় খুব দ্রুতই মন্ত্রিপরিষদে রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই মন্ত্রীসভায় এই রদবদলের কাজটি হতে পারে। এর আগে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে ফিরেই মন্ত্রীসভায় রদবদলের ফাইলটি হাতে নিতে পারেন। সচিবালয়েও এ ধরনের গুঞ্জন ভাসছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে শোনা যাচ্ছে ঈদের পরপরই ঘটনাটি ঘটতে পারে। এদিকে মন্ত্রীত্ব প্রত্যাশী এমন নেতারা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন নেত্রীর দিকে। অন্য দিকে কাজেকর্মে যারা ইমেজ সঙ্কটে তারা মন্ত্রীত্ব হারানোর অনেকটাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।